মহিউদ্দিন আহমেদ রিপন লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নিষিদ্ধ করা হলেও লাখাইয়ের বিভিন্ন হাট-বাজারে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। এতে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ।
এদিকে, পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সহজলভ্যতা ও ব্যবহারের সুবিধা থাকায় ক্রেতা এবং বিক্রেতারা প্রতিনিয়ত অবাধে ব্যবহার করে যাচ্ছেন নিষদ্ধ এই পলিথিন।
উপজেলার কালাউক সড়কবাজার,বামৈবড়বাজার,লাখাই বাজার,মোড়াকরি বাজার,বুল্লাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন দোকানগুলোতে আগের মতোই চলছে পলিথিনের ব্যবহার। ক্রেতারা মাছ, মাংস, সবজি, চাল, ডাল, কিংবা অন্য যেকোনো পণ্য কিনলেই পলিথিন ব্যাগে করে নিয়ে যাচ্ছে ।
নিষিদ্ধ হওয়ার পর পলিথিনের দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীরা সেই টাকাও তুলে নিচ্ছেন পণ্যের দামের সাথে। ক্রেতারাও পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব না বুঝে বাড়ীতপ নিয়ে যাচ্ছে নানা ধরণের ভোগপণ্য।
২০০২ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পলিথিন ব্যাগ বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করা নিষিদ্ধ করেছিল সরকার।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) অনুযায়ী যে কেউ অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আর বাজারজাত করলে ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষা ও জনসাধারণ পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য উক্ত আইন বাস্তবায়ন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ ও ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারগুলোতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বাজারগুলোতে পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ার ২৩দিন অতিবাহিত হলেও প্রকাশ্যে পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার চলমান রয়েছে। এ আইন বাস্তবায়ন করতে নেওয়া হচ্ছেনা কোনো উদ্যোগ।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিদদের মতে পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষ ক্যান্সার ও চর্মরোগের মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকেটজাত করলে তাতে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে।
অন্যদিকে উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত ও চর্মরোগের সৃষ্টি হতে পারে।
পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পচনশীল না হওয়ায় মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে থাকে ।
মাটিকে উত্তপ্ত করা ও গাছের মূল মাটির গভীরে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে পলিথিন। পুকুরের তলদেশে জমে থাকা পলিথিন মাছ ও জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব সঙ্কট সৃষ্টি করে বলে জানা যায়।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই যুগ পূর্বে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এর বাস্তবায়ন না হওয়ায় পলিথিন ব্যবহারে মানুষ দিন দিন আরোও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বাড়ী থেকে কোনো ধরণের ব্যাগ বা থলে না নিয়েই বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতে আসে ক্রেতাসাধারন।
বাজারে আসা কয়েকজন ক্রেতার সাথে আলাপ করে জানা যায়, বাড়ী থেকে বাজারে খালি হাতে আসা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। কারণ বাজারে যেকোনো পণ্য ক্রয় করলে এখন দোকানিরা সুন্দর করে পলিথিন ব্যাগে ভরে হাতে ধরিয়ে দেন। তাহলে আমরা বাড়ী থেকে কেন ব্যাগ নিয়ে আসব? একসময় লাখাইয়ে লোকজন বাজার সওদা করতে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি,খলই,ডোলা ব্যবহার করতো।বর্তমানে এসব আর তেমন দেখা যায় না।
তবে অনেকে এখনও চটের থলে,কাপড়ের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করে আসছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান মিজান বলেন, ‘পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার অনেক আগেই নিষিদ্ধ হয়েছিল,কিন্তু আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি। পলিথিন এর যথেচ্ছা ব্যবহার এর ফলে কৃষিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।পলিথিন অপচনশীল হওয়ায় চাষাবাদ করতে সমস্যা হয় ও উৎপাদনে প্রভাব ফেলে।তাই পলিথিন এর ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কাজী সামছুল আরেফিন জানান পলিথিন এর ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে।আমরা মাছ,মাংস, শাকসবজি পলিথিন এ মুড়িয়ে ফ্রিজ এ রাখি এতে খাদ্য সামগ্রীর সাথে পলিথিন এর কন্টামিনেশন হয়।এ ধরনের খাদ্য পন্য গ্রহণের ফলে ক্যান্সার সহ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবণা দেখা যায়।তাই পলিথিন এর ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ( বাপা) হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন পলিথিন আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।নদীনালা খাল-বিলে পড়ছে।এতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ পলিথিন এর ক্ষতিকর প্রভাবে জলজ প্রানী ও উদ্ভিদ রয়েছ হুমকিতে।