ডেস্ক রিপোর্ট
কক্সবাজারের সুগন্ধা সৈকতে দেখা যাচ্ছে এক ভিন্নধর্মী আয়োজন—‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ এবং সিগাল পয়েন্টের ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’। এই দোকানগুলোতে প্লাস্টিক বোতল জমা দিলেই পর্যটক ও স্থানীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে চাল, ডাল, ডিম, সয়াবিন তেলসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী এবং টি-শার্টের মতো উপহার। চার মাসব্যাপী এই উদ্যোগটি চালাচ্ছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, যা ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
বৃহস্পতিবার এই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ এই উদ্যোগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন এবং জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর হোসেন।
জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কক্সবাজার সৈকত প্রতিবছর লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে। কিন্তু তাদের অনেকেই প্লাস্টিক বোতল ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলে যান, যা সৈকত ও সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।’
প্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান দূষণ যে সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, সেটাও তিনি তুলে ধরেন। মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের দূষণে এখন প্রায় ৮০% সামুদ্রিক পানি আক্রান্ত।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রথম দিনেই ৪ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আয়োজকরা অন্তত ১০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক সংগ্রহের আশা করছেন, যা পরিবেশ রক্ষায় অনন্য ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি জমাকৃত প্লাস্টিক দিয়ে সৈকতে একটি ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনাও আছে, যা স্থানীয় ও পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।
এই উদ্যোগটি শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, স্থানীয় দরিদ্র মানুষের জন্যও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
সিগাল পয়েন্টে কাজ করেন সানোয়ারা বেগম, তিনি ৪ কেজি প্লাস্টিক জমা দিয়ে বিনিময়ে পেয়েছেন এক লিটার সয়াবিন তেল। একইভাবে স্থানীয় আরও অনেকে চাল, ডাল, আটা সংগ্রহ করতে পেরেছেন। যেখানে এক কেজি প্লাস্টিকের বাজারমূল্য ২০-৩০ টাকা, সেখানে এই উদ্যোগে তারা পাচ্ছেন প্রায় ৫০-৮০ টাকার সমমানের পণ্য।
ঢাকা মিরপুর থেকে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সৈকতে এসে প্লাস্টিক জমা দিয়ে টি-শার্টের মতো উপহার পাওয়া এক নতুন অভিজ্ঞতা। এটি যেমন আমাদের জন্য আনন্দদায়ক, তেমনই সৈকতের পরিবেশকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করছে।’