ডেস্ক রিপোর্ট
ফুলটি মৌলভীবাজারের পাথারিয়া পাহাড়ে দেখেছি ২০১০ সালে। ২০২৩ সালে আবার দেখি বান্দরবান থেকে নীলগিরির পথে সাইরু হিল রিসোর্টে। দ্বিতীয়বার দেখার পর মনে হলো ফুলটি চেনা, আগে কোথাও দেখেছি। অনুমান সত্যি হলো। কম্পিউটারে পুরোনো ছবির ফোল্ডারে খুঁজে পেলাম পাথারিয়ার সেই ছবি। তবে সাইরুর গাছটির তুলনায় বেশ বড় এবং অনেক সতেজ।
আকারে ছোট হলেও প্রাচুর্য এবং চকটদার রঙের কারণে ফুলগুলো সহজেই নজর কাড়ে।
সাইরুর গাছটি ছোট, দুর্বল, ফুলের সংখ্যাও কম। অনেক গাছের আড়ালে থাকায় ভালোভাবে ছবি তোলা গেল না। ওদিকে আবার বিকেল গড়িয়ে ধেয়ে আসছিল পাহাড়ি সন্ধ্যা। ভালো ছবি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকল না। তবে হাতের নাগালে থাকায় দীর্ঘ মঞ্জরিতে ফুটে থাকা ফুলগুলো খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ হলো। তখন এ ফুলের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ আরও দু–একটি ফুলের কথা মনে হলো। গড়নের দিক থেকে মিলেশিয়া বা মণিমালার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল বলে মনে হলো। ফুলটির স্থানীয় কোনো নাম পাওয়া গেল না। বিভ্রান্তি এড়াতে এ গাছের নাম ‘বনমালা’ রাখা যেতে পারে।
এই গাছ Tadehagi triquetrum ১ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। খাড়া ডালপালা, শাখাগুলো ত্রিভুজাকার। পাতা রোমশ, লম্বাটে-ডিম্বাকার বা হৃৎপিণ্ড আকৃতির, পর্যায়ক্রমে সজ্জিত। ফুল ছোট, অনেকটা মটর ফুলের মতো, গোলাপি থেকে ফ্যাকাশে বেগুনি, পাপড়িসহ প্রায় বৃত্তাকার, ডগা খাঁজকাটা ও রোমশ। এ গাছ হিমালয়ের ১৪০০ মিটার নিচে চীন, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় পাওয়া যায়। ফুল ফোটার মৌসুম জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত।
শিশুদের কৃমির সমস্যা, খিঁচুনি এবং বদহজমে এই গাছ কার্যকর। এ ছাড়া পাইলস ও ফোড়ার চিকিৎসা, প্লিহা প্রাণবন্ত করা, হজমশক্তি বাড়ানো, অর্শ্বরোগে, পেটে অস্বস্তি, ক্রনিক কাশি, যক্ষ্মা ও প্রস্রাবের সমস্যার জন্য গাছের নানান অংশ কাজে লাগে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মরিচা বা জঙ্গইল্লা শাক অনেকবার দেখেছি। সর্বশেষ রাঙামাটি শহর থেকে নানিয়ারচর যাওয়ার পথে একটি অনুচ্চ টিলার ওপর গাছটি দেখি। টিলায় উঠেছিলাম ওলকচুর ছবি তুলতে। চারপাশে আদিবাসীদের কিছু সবজিখেত ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল। খেতের এক পাশে পাহাড়ের ঢালে গাছগুলো বেশ ঝোপালো হয়ে আছে। পাতা দেখতে অনেকটা দাঁতরাঙার মতো। তবে গড়নের দিক থেকে খানিকটা লম্বাটে। এ কারণে দাঁতরাঙা ভেবে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মরিচা বা জঙ্গইল্লা শাক Sarcochlamys pulcherrima ছোট আকারের চিরহরিৎ গুল্ম, ২ থেকে ৬ মিটার উঁচু। শাখা-প্রশাখা ও পাতার ডালপালা ঘনবদ্ধ মখমলের মতো রোমশ। উপপত্র ত্রিভুজাকৃতির বা ডিম্বাকার, ৮ থেকে ১০ মিলিমিটার। পাতা-বৃন্ত ২ থেকে ৬ সেন্টিমিটার, মধ্যবর্তী শিরা তিন বা চার জোড়া, ওপরের পিঠ গাঢ় সবুজ, প্রায় লোমহীন, নিচের পিঠ ধূসর পশমি এবং শিরার ওপর লোমযুক্ত। পুরুষ ফুল প্রায় ডাঁটাবিহীন। স্ত্রী ফুল শূন্য দশমিক ৩ থেকে শূন্য দশমিক ৫ মিলিমিটার। এই গাছ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিবন, প্লাবনভূমি এবং স্যাঁতসেঁতে গৌণ বনে, ৮০০ থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায় জন্মে। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফুল ফোটে।
আসামের মিশিং সম্প্রদায়ের লোকেরা এ গাছের কচি কাণ্ড, পাতা ও ফল শূকরের মাংসের সঙ্গে সবজি হিসেবে খায়। অপরিণত পাতা, ফুলের কুঁড়ি এবং ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। কচি পাতা ডায়ারিয়া ও আমাশয়ে কার্যকর। এই উদ্ভিদে লাক্ষা চাষ করা হয়। কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার্য।