বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) হিসেবে, চলতি বছর গত ১৬ নভেম্বর বাতাসের মান ছিল সব চাইতে বেশি খারাপ। ওই দিন ঢাকার বায়ুমান সূচক বা একিউআই ছিল ২৬৯। যা চলতি বছরের মধ্যে সব চাইতে বেশি।
গত ৯ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে বায়ুমান সূচকে জানুয়ারির বায়ু সবচাইতে বেশি অস্বাস্থ্যকর। তবে বছরের ১২ মাসের মধ্যে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই চার মাসের বাতাস সব চাইতে অস্বাস্থ্যকর থাকে।
ঢাকার আমেরিকান দূতাবাসের গত ৯ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসের গড় বায়ুমান সূচক হচ্ছে ২৫০। অন্যদিকে নভেম্বরে যা থাকে ১৭৭, ডিসেম্বরে ২১৮ এবং ফেব্রুয়ারিতে ২২১। সারা বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় দূষণের পরিমাণ এই সময়ে সব চাইতে বেশি।
তবে ২০২১ সালের গড় বায়ুমান সূচক ১৫৯, ২০২২ সালের পর বায়ুমান সূচক ১৬০ এবং ২০২৩ সালের গড় বায়ুমান সূচক ১৭১। গত ১০৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ু ছিল ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ২৮১ এবং সর্বনিম্ন গড় বায়ুমান সূচক ছিল ২০২১ সালের জুলাই মাসে ৭৬।
বাতাসের অস্বাস্থ্যকর এই অবস্থা কেন— এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে নভেম্বর মাস প্রায় বৃষ্টিশূন্য ছিল। বৃষ্টি না হওয়াতে রুক্ষতা বেড়ে গেছে। গাছের পাতা ঝরাও এই সময়ে শুরু হয়েছে। ফলে গাছের যে পাতা ধুলা ধরে রাখতো তার হার কমে যাওয়াতে বাতাসে ধুলার পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে শীত শুরু হওয়াতে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সাধারণত শীতের এই সময়কে নির্মাণ মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কারকাজ, মেগা প্রকল্প, আশপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প-কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো—এসব কারণে শহর দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। বায়ুদূষণ রোধে সাবেক সরকারের আমল থেকেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল। সেগুলোর এখন কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ডিসেম্বর মাসের দূষণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।
এদিকে, শীতে সব চাইতে প্রকট আকার ধারণ করে এলার্জি। সাধারণত যাদের ডাস্ট এবং কোল্ড এলার্জি থাকে তারা শীতে সব চাইতে বেশি কষ্ট করেন। এক দিকে ঠান্ডা আরেক দিকে বাতাসে ধুলাবালির বেশি উপস্থিতি ঢাকার মানুষকে বেশি ভোগায়। কোভিড-১৯ এর পর ঢাকাসহ সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা বেড়েছে। এখন বায়ু দূষণের দিন শুরু হওয়াতে আবারও মাস্ক ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এতে করে কিছুটা হলেও মানুষ স্বস্তিতে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বায়ুদূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বায়ুদূষণে তিন ধরনের ক্ষতি হয়— তাৎক্ষণিক, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি। তাৎক্ষণিক ক্ষতির মধ্যে যাদের শ্বাসতন্ত্রীয় রোগগুলো। হাঁচি, কাশি, হাঁপানি—এসব রোগ যাদের আছে সেগুলো বেড়ে যায়। অ্যালার্জি বেড়ে যায়। ফাঙ্গাল ইনফেকশন জাতীয় রোগগুলো বাড়ে। ফুসফুসের প্রদাহ বাড়ে, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা বাড়ে। মধ্যমেয়াদে এই অসুখগুলো বাড়তে বাড়তে ফুসফুসের সম্প্রসারণ ও প্রসারণ ক্ষমতা কমে যায়। পাশাপাশি বায়ুদূষণের মূল কারণ যে ক্ষুদ্র কণা, সেগুলো ফুসফুসের রন্ধ্রগুলো ছোট করে দেয়। পাশাপাশি রক্তে মিশে গিয়ে লিভার ও কিডনি অকার্যকর করে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার প্রধান শঙ্কা হচ্ছে ফুসফুসের ক্যান্সার। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা ও সাবধানতা খুব জরুরি। বড় ক্ষতির মধ্যে গর্ভবতীদের গর্ভপাত হবার আশঙ্কাও বেড়ে যায়, মায়ের পেটে শিশুর ওজন কম হবার প্রবণতাও এখন দেখা যাচ্ছে।