লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ এককালে গ্রামের মানুষ খড়,শন ও টিন কাঠের গৃহ নির্মান করতো।তখন অবস্থাপন্ন যে সকল পরিবার কাঠ এবং টিনে ছাউনি দিয়ে গৃহ নির্মান করতো তাঁরা বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় গাছ থেকে কাঠ চিরাই করতো পেশাদার করাতিদের সাহায্যে।
এ সময় সনাতনী পদ্ধতিতে কাঠ চিরাই কাজে জড়িত করাতীদের বেশ কদর ছিল। তখন এ পেশায় জড়িত করাতীরা দলবেঁধে দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে এ চিরাইয়ের করে বেড়াতো।এরা ৪ জনের একটি দলে একজন দলনেতার নেতৃত্বে কাজ করতো।যখন যে গৃহস্থের বাড়িতে কাঠ চিরাই করতে যেত সে বাড়িতে তাদের ৩ বেলা আহার ও থাকার ব্যবস্থা হতো।সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে রাতে বেলা সুরেলা কণ্ঠে চলতো পুথি পাঠ করে বিনোদন। কাঠ চিরাই কাজে মিলত বেশ ভালো পারিশ্রমিকও।বর্তমানে পেশাগত করাতিদের সেদিন নেই। যান্ত্রিক যোগে করাত কলের দাপটে টিকতে না পেরে তা হারিয়ে যেতে বসেছে।এখন আর গৃহস্থ বাড়ীতে কাঠ চিরাই এর দৃশ্য নজরে পড়ে না।এখনো যারা এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রয়েছেন তারাও মূলত করাতকলের উপর নির্ভরশীল। করাতকলে প্রকান্ড যে গাছ তুলে চিরাই করা সম্ভব হয়ে উঠেনা সে গাছ গুলো ফালি করতে ডাক পড়ে করাতিদের।
এমনিই এক সনাতনী পদ্ধতিতে কাঠ চিরাই কাজে জড়িত করাতির সাথে দেখা মেলে লাখাই উপজেলার স্থানীয় বুল্লাবাজার এ। করাতিরা করাত কলের বড় বড় গাছ চিরাই করে ছোট ফালি করছিল।করাতিদলের সরদার বিল্লাল খন্দকার(৬০) এর সাথে আলাপকালে জানান আমি ২০ বছর বয়সে এ কাঠ চিরাই কাজে জড়িত হয়ে অদ্যাবধি এ পেশায় কোন রকমে টিকে আছি। আগে আমাদের এ পেশার বেশ কদর ছিল এবং আয়রোজগার ও বেশ ভালো হতো।বর্তমানে কাজ অনেক কমে গেছে। করাত কলের গাছ ফালি দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে ৪ জন লোকজনের খাওয়া দাওয়া বাদ তেমন বেশি অবশিষ্ট থাকে না।গড়পড়তা মাসে ৮-১২ হাজার টাকার মতো আয় হয়।এ আয়ে এ দূর্মূল্যের বাজারে পরিবার এর ভরনপোষণ চালানো কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। তবুও চালিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন গত্যন্তর নেই কারন আর কোন কাজ শিখি নাই।
আলাপকালে জানা যায় বিল্লাল খন্দকার এর বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার লেবাকান্দি গ্রামে।ষাটোর্ধ বিল্লাল খন্দকার জানান তাঁর ৭ সদস্যে পরিবারে স্ত্রী, ৩ ছেলে ২ মেয়ে।২ মেয়ে ও এক ছেলের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করে। নিজের বলতে ভিটেমাটি ব্যতিত কোন জমিজমা নেই। তাই বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হচ্ছে।