অনলাইন ডেস্কঃ চট্টগ্রামের মীরসরাই ও ফেনীর ছাগলনাইয়া হয়ে বয়ে যাওয়া ফেনী নদীর পানি প্রবাহ বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এতে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বুধবার (২১ আগস্ট) বিকাল থেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের উদ্যোগে বন্যাকবলিত মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দিনভর পানিতে নিমজ্জিত এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলার আমলীঘাট, করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার, অলিনগর গ্রাম, কাটাগাং, হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর, পূর্ব আজমনগর ও খিলমুরালী; ধুম ইউনিয়নের শুক্রবারইয়াহাট, মিনাবাজার, আনন্দবাজার গ্রামেও বন্যার পানি বাড়ছে। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মীরসরাইয়ের মহামায়া লেকের পানি বিপদসীমার কাছাকাছি ওঠে যাওয়ায় স্লুইসগেটের সবগুলো দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে উপজেলার দুর্গাপুর, কাটাছরা ও ইছাখালী ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় চট্টগ্রামমুখী লেন পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। এতে করে যানবাহন চলাচল করছে অত্যন্ত ধীরগতিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা ৬ দিনের বৃষ্টিতে এবং ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার কারণে উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও শত শত মাছের পুকুর ডুবে গেছে।
গত বুধবার বিকাল থেকে এলাকার স্বেচ্ছাসেবকরা বোট দিয়ে কিছু কিছু এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার সকালেও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধারকাজে নিয়োজিত থাকলেও দুপুরের দিকে সেনাবাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামতে দেখা গেছে।
সংগীতশিল্পী ও স্বেচ্ছাসেবক মহিবুল আলম আরিফ জানান, পশ্চিম জোয়ার ও আজমনগর গ্রামের পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে মহামায়া লেক থেকে বোট নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উপজেলার ধুম ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মেজবা-উল মানিক বলেন, ‘এলাকার শুক্রবারইয়াহাট ও মিনাবাজার বেশি প্লাবিত হয়েছে। এখানে আমরা নিজেদের উদ্যোগে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছি। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন জানান, মীরসরাইয়ে ৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় দুই হাজর ৫০০ জন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। মীরসরাই উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। জেলা প্রশাসক থেকে ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও এলাকার তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছেন।